শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৬

বিবাহের অভিভাবক ও শর্তাবলী, অভিভাবকের বাধা ও করণীয়

আসসালামু আলাইকুম
                                                                                                                    লেখক: শাইখ আবদুল্লাহ আল কাফী
                                                                                                                   লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
                                                                                                 দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “অভিভাবক ব্যতীত কোন বিবাহ নেই।” (তিরমিযী) তিনি আরো বলেন, “যে নারী নিজে নিজের বিবাহ সম্পন্ন করবে তার বিবাহ বাতিল বাতিল বাতিল। অভিভাবকরা যদি ঐ নারীর বিবাহে বাধা সৃষ্টি করে, তবে যার ওলী নেই সুলতান বা শাসক তার ওলী বা অভিভাবক হবে।” (আহমাদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
তাই যে কোন নারীর বিবাহের জন্য ওলী বা অভিভাবক আবশ্যক। অভিভাবক উপযুক্ত হওয়ার জন্য ৬টি শর্ত আছেঃ

(১) আকল বা বিবেক সম্পন্ন হওয়া (পাগল হলে হবে না)
(২) প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া
(৩) স্বাধীন হওয়া
(৪) পুরুষ হওয়া (বিবাহের ক্ষেত্রে নারী নারীর অভিভাবক হতে পারবে না)
(৫) অভিভাবক ও যার অভিভাবক হচ্ছে উভয়ে একই দ্বীনের অনুসারী হওয়া। (কাফের মুসলিম নারীর অভিভাবক হবে না। মুসলিম কাফের নারীর অভিভাবক হবে না।)
(৬) অভিভাবক হওয়ার উপযুক্ত হওয়া। (অর্থাৎ বিবাহের জন্য কুফূ বা তার কন্যার জন্য যোগ্যতা সম্পন্ন বা সমকক্ষ পাত্র নির্বাচন করার জ্ঞান থাকা ও বিবাহের কল্যাণ-অকল্যাণের বিষয় সমূহ অনুধাবন জ্ঞান থাকা)

অভিভাবক হওয়ার শর্তঃ
উপরের কোন একটি শর্ত না পাওয়া গেলে তখন ঐ ব্যক্তি অভিভাবকত্ব হারাবে, তখন ঐ অভিভাবকত্ব পরবর্তী নিকটতম ব্যক্তির নিকট স্থানান্তরিত হবে। যেমন দাদা, তারপর ভাই, তারপর চাচা ইত্যাদি। শেষ পর্যন্ত যদি কেউ না থাকে, তবে দেশের মুসলিম শাসক বা তার প্রতিনিধি বা গভর্ণর ঐ নারীর অভিভাবক হিসেবে গণ্য হবে।

বিবাহের ক্ষেত্রে সমকক্ষতা বা যোগ্যতাঃ
কোন যুবক যদি দ্বীনদারী ও চরিত্রের দিক থেকে পছন্দনীয় হয়, অর্থাৎ সে আল্লাহকে ভয় করে চলে ফরয ইবাদত সমূহ যথাযথ আদায় করে যাবতীয় হারাম থেকে বেঁচে চলে এবং আচরণ ও চরিত্রের দিক থেকে উত্তম হয়, তবে সেই সর্বাধিক উপযুক্ত পাত্র। এ সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوهُ إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ
“তোমাদের নিকট যদি এমন পাত্র বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে আসে যার দ্বীনদারী ও চরিত্র তোমাদের নিকট পছন্দসই, তবে তার সাথে তোমাদের কন্যাদের বিবাহ দিয়ে দাও। যদি তোমরা এরূপ না কর (দ্বীনদার ও চরিত্রবান পাত্রকে প্রত্যাখ্যান কর এবং তাদের সাথে কন্যাদের বিবাহ না দাও) তবে এর কারণে পৃথিবীতে অনেক বড় ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। (তিরমিযী)
যদিও দুনিয়াদারী বা অর্থ-সম্পদের বিষয়টিকেও কেউ কেউ উপযুক্ত হওয়ার শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্তু তা যথার্থ নয়। কেননা আল্লাহ বলেছেন,
{وَأَنْكِحُوا الْأَيَامَى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ إِنْ يَكُونُوا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ } [النور: 32]
“তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি সম্পদহীন নিঃস্ব ও ফকীর হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” (নূরঃ ৩২)
এটা বিবাহের বরকত।
জমহূর বা অধিকাংশ বিদ্বান পাত্র কুফু’ বা উপযুক্ত হওয়ার জন্যে চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তা হচ্ছে, ধর্ম, স্বাধীন, বংশ ও পেশা। অর্থাৎ মুসলিম কন্যাকে কাফেরের সাথে বা সৎকর্মশীলা কন্যাকে ফাসেকের সাথে বিবাহ দিবে না, স্বাধীন নারীকে কোন ক্রিতদাসের সাথে বিবাহ দিবে না, ভাল বংশের কন্যা নীচু বংশের লোকের সাথে বিবাহ দিবে না এবং কন্যার পরিবার ভাল পেশাদার হলে নিচু মানের পেশাদার পাত্রকে (যেমন, নাপিত, ধোপা, মুচি ইত্যাদি) কন্যা দিবে না। কিন্তু ইমাম মালেক শুধু ধর্ম ও চরিত্রের বিষয়টিকেই পাত্রের উপযুক্ততার বিশেষণ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। মোল্লা আলী ক্বারী বলেছেন, ধর্ম ও চরিত্র ব্যতীত পাত্রের যদি আর কোন উপযুক্ত বিশেষণ না থাকে এবং কন্যা তাতেই সন্তুষ্ট থাকে, তবে বিবাহ বিশুদ্ধ কোন অসুবিধা নেই। (দ্রঃ তোহফাতুল আহওয়াযী শরহে জামে তিরমিযী, হা/১০০৪)

বিবাহে ওলী বা অভিভাবকের বাধাঃ
একজন উপযুক্ত যুবক যদি কোন মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দেয় (অর্থাৎ সেই যুবক দ্বীনদারী ও চরিত্রের দিক থেকে পছন্দনীয় হয়), আর মেয়েও ঐ যুবককে পছন্দ করে, আর শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতীত মেয়ের অভিভাবক ঐ বিবাহে বাধা প্রদান করে তবে শরীয়তের পরিভাষায় এটাকে বলা হয়, العضل বা বিবাহে বাধা। (ইবনে কুদামা- মুগনী ৭/৩৬৮) এ সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে,
وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَبَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلا تَعْضُلُوهُنَّ أَنْ يَنْكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ إِذَا تَرَاضَوْا بَيْنَهُمْ بِالْمَعْرُوفِ ذَلِكَ يُوعَظُ بِهِ مَنْ كَانَ مِنْكُمْ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكُمْ أَزْكَى لَكُمْ وَأَطْهَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لا تَعْلَمُونَ
“আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে (রেজঈ) তালাক দিয়ে দাও এবং তারপর তারাও নির্ধারিত ইদ্দত পূর্ণ করতে থাকে, (কিন্তু ফেরত না নেয়ার কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়) তখন তাদেরকে পূর্ব স্বামীদের সাথে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে নিয়মানুযায়ী বিয়ে করতে বাধাদান করো না। এ উপদেশ তাকেই দেয়া হচ্ছে, যে আল্লাহ ও কেয়ামত দিনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। এর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে একান্ত পরিশুদ্ধতা ও অনেক পবিত্রতা। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। (বাকারাঃ ২৩২)
মা’কাল বিন ইয়াসার (রাঃ)এর ভগ্নিকে তার স্বামী (রেজঈ) তালাক দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার আগে তাকে ফেরত নেয়নি। ফলে বায়েন বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরবর্তীতে তার স্বামী আবার নতুন বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রীকে (মা’কালের ভগ্নিকে) ফেরত নিতে চায় এবং ঐ মেয়েটিও তাতে রাজি হয়ে যায়। তখন মা’কাল রেগে গেলেন এবং বেঁকে বসলেন ও তার সাথে বিবাহ দিতে অস্বীকার করলেন। তিনি বলেন, আমার ভগ্নিকে তোমার সাথে বিবাহ দিলাম, তোমাকে সম্মাণিত করলাম। তারপর তুমি তাকে তালাক দিয়ে দিলে! আবার তুমি তাকে বিবাহ করার প্রস্তাব নিয়ে হাযির হয়েছো? আল্লাহর কসম কখনই সে তোমার কাছে ফেরত যাবে না। তোমার সাথে তার বিবাহ দিব না। মা’কাল বলেন, (দ্বীনদারী ও চরিত্রের দিক থেকে) লোকটির কোন সমস্যা ছিল না, আর আমার ভগ্নিও তার কাছে ফেরত যেতে ইচ্ছুক ছিল। তখন আল্লাহ এই আয়াতটি নাযিল করেন।
মা’কাল বলেন, এখন আমি এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করব হে আল্লাহর রাসূল! একথা বলে তিনি তার ভগ্নিকে পূর্বের স্বামীর সাথে বিবাহ দিয়ে দেন।
ইমাম বুখারী বলেন, যদিও এখানে বিবাহিতা নারীকে কেন্দ্র করে আয়াতটি নাযিল হয়েছে, কিন্তু এখানে কুমারী নারীও শামিল। অর্থাৎ কুমারীর জন্যও একই হুকুম।
(হাদীছটি বুখারী শরীফে কয়েক স্থানে বর্ণিত হয়েছে এবং আবু দাউদও বর্ণনা করেছেন। বিস্তারিত দেখুন সহীহ বুখারী- অধ্যায়ঃ বিবাহ, অনুচ্ছেদঃ অভিভাবক ব্যতীত বিবাহ নেই)

কি করলে অভিভাবক عاضل বা বাধাপ্রদাকারী হিসেবে গণ্য হবে?

(১) অভিভাবকের অধিনস্থ মেয়ে যদি নির্দিষ্টভাবে কোন যুবককে পছন্দ করে এবং পাত্রও উপযুক্ত হয়, তখন যদি অভিভাবক তার সাথে বিবাহ দিতে (শরীয়ত সম্মত) কোন কারণ ছাড়াই বা দুর্বল যুক্তিতে (যেমন, লেখাপড়া শেষ করা ইত্যাদি) অস্বীকার করে, তাহলে সে বাধাপ্রদানকারী হবে। (আল মাওসুয়া আল ফেকহিয়্যা ৩৪/২৬৫)
(২) অভিভাবক যদি বিবাহের প্রস্তাবকারীদের উপর অহেতুক কঠিন শর্ত আরোপ করে, যা শুনলেই তারা পলায়ন করবে এবং তা পূর্ণ করা অনেক সময় অসাধ্য হয়ে যায়, তখন সে বাধাপ্রদানকারী গণ্য হবে। (ইবনে তাইমিয়া- কিতাবুল ইনসাফ ৮/৭৫)
শাইখ ইবনে জাবরীন (রহঃ) বলেন, প্রস্তাবকারীর উপর কঠরোতা আরোপ করা, অথবা অপ্রয়োজনীয় অত্যধিক শর্তারোপ করা, অথবা উপযুক্ত পাত্রকে প্রত্যাখ্যান করা, অথবা অতিরিক্ত মোহর চাওয়া। অভিভাবক যদি এরূপ করে তবে সে বাধাপ্রদানকারী গণ্য হবে এবং সে হবে ফাসেক। তখন তার অভিভাবকত্ব বাতিল হয়ে যাবে।

কি কারণে অভিভাবকত্ব বাতিল হয়?

(১) অভিভাবক যদি সম্পূর্ণরূপে সালাত পরিত্যাগকারী হয় তবে জমহূর বিদ্বানের মতে সে মুসলিম নয়। আর তখন সে মুসলিম নামাযী মেয়ের অভিভাবকত্ব হারাবে।
(২) অভিভাবক যদি নিয়মিত সালাত আদায় না করে- কখনো পড়ে কখনো ছাড়ে অথবা কখনো মদ্যপান করে, তবে সে জমহূর বিদ্বানের মতে সে ফাসেক মুসলিম। আর ফাসেক মুসলিম মুমিন নারীর অভিভাবক হতে পারবে কি না সে সম্পর্কে ফিকাহবিদদের মাঝে মতবিরোধ আছেঃ
শাফেঈ ও হাম্বলী মাযহাব মতে তার অভিভাবকত্ব সহীহ নয়। হানাফী ফিকাহবীদদের মতে ফাসেক অভিভাবকত্ব সহীহ। মালেকী মাযহাবের প্রচলিত মতও এটাই। তবে তাঁরা ফাসেকের অভিভাবকত্ব অপছন্দ করেছেন।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, অভিভাবকের জন্য জায়েয নেই মেয়ের অপছন্দনীয় পাত্রের সাথে জোর করে তার বিবাহ দেয়া। আর ইমামদের ঐক্যমতে মেয়ের পছন্দনীয় পাত্রের সাথে তার বিবাহে বাধা প্রদান করা যাবে না। মেয়েকে জোর করা ও বাধা দেয়া জাহেল ও জালেমদের কাজ। (মাজমু ফাতাওয়া ৩২/৫২)
(৩) অভিভাবক উপযুক্ত হওয়ার জন্য যে ৬টি শর্ত রয়েছে তার কোন একটি নষ্ট হলে, অভিভাবকত্ব হারাবে।
(৪) অভিভাবক যদি বাধা প্রদানকারী হয়, তবে সে অভিভাবকত্ব হারাবে। এবং অভিভাবকত্ব তার পরের অভিভাবকদের নিকট স্থানান্তর হবে। (ফতোয়া লাজনা দায়েমা- স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড ১/১৬৮)

এ অবস্থায় নারীর অভিভাবক কে হবে?
উল্লেখিত যে কোন কারণে যদি অভিভাবকত্ব হারায়, তবে অভিভাবকত্ব পরবর্তী নিকটতম ব্যক্তির নিকট স্থানান্তরিত হবে। যেমন দাদা, তারপর ভাই, তারপর চাচা ইত্যাদি। শেষ পর্যন্ত যদি কেউ না থাকে, তবে দেশের মুসলিম শাসক বা তার প্রতিনিধি বা গভর্ণর বা মুসলিম কাজী ঐ নারীর অভিভাবক হিসেবে গন্য হবে। (দেখুন মুগনী ৭/৩৪৬)
হানাফী ফিকাহবিদগণ (রহঃ) বলেন, কোন নারীকে যদি তার অভিভাবক বাধা দেয়, তবে সে তাদের বিরুদ্ধে সুলতানের (শাসকের) কাছে অভিযোগ দায়ের করবে। যাতে করে তাকে যুলুম থেকে মুক্ত করে এবং উপযুক্ত পাত্রের সাথে বিবাহ দিয়ে দেয়। (হাশিয়া ইবনে আবেদীন ৩/৮২)
সৌদী আরবের সাবেক গ্রাণ্ড মুফতী শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম (রহঃ) বলেন, নারী যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয়, আর তাকে বিবাহের জন্য দ্বীন ও চরিত্রের দিক থেকে পছন্দনীয় উপযুক্ত পাত্র প্রস্তাব করে, আর তার মত পাত্রকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য অভিভাবক কোন দোষ খুঁজে না পায়, পাত্রও নিজের যোগ্যতাকে প্রমাণ করতে সক্ষম থাকে, তখন ঐ নারীর অভিভাবকের উপর আবশ্যক হচ্ছে পাত্রের আবেদন গ্রহণ করা এবং তার সাথে তাদের মেয়ের বিবাহ দেয়া। সে যদি তা করতে অসম্মত হয়, তবে পাত্রির পছন্দের বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করার ব্যাপারে সতর্ক করতে হবে। তারপরও যদি অসম্মতিতে স্থির থাকে,তবে তার অভিভাবকত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তখন অভিভাবকত্ব পরবর্তী নিকটাত্মীয়দের প্রতি স্থানান্তরিত হয়ে যাবে। (ফতোয়া শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম ১০/ ৯৭)
শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ উছাইমীন (রহঃ) বলেন, অভিভাবক যদি দ্বীন ও চরিত্রের দিক থেকে পছন্দনীয় উপযুক্ত পাত্রের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তার সাথে বিবাহ দিতে অস্বীকার করে, তবে তার অভিভাবকত্ব পরবর্তী অধিকতর নিকটাত্মীয়ের নিকট স্থানান্তরিত হয়ে যাবে। কিন্তু তারাও যদি অস্বীকার করে, তবে শরীয়ত সম্মত হাকেমের নিকট অভিভাবকত্ব স্থানান্তরিত হবে। তখন শরীয়ত সম্মত হাকেম বা শাসক তার বিবাহ দিয়ে দিবে। (ফতোয়া নূরুন আলাদ দারব, অধ্যায়ঃ ৩১৩)
ইবনুল মুনযির (রহঃ) বলেন, বিদ্বানদের ঐক্যমত আছে যে সুলতান নারীর বিবাহ দিয়ে দিবে যদি সে বিবাহ করতে চায় এবং (দ্বীন ও চরিত্রের দিক থেকে) উপযুক্ত পাত্র পছন্দ করে থাকে; কিন্তু অভিভাবক তার বিবাহে বাধা প্রদান করে। (আল ইজমা ১/৭৮)

বাধাপ্রাপ্ত নারীর করণীয় কি?

শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ উছাইমীন (রহঃ) বলেন, অনেক অভিভাবক উপযুক্ত ও সমকক্ষ প্রস্তাবকারীদেরকে নানা অযুহাতে প্রত্যাখ্যান করে; অথচ তার ব্যাপারে পাত্রীর সম্মতি আছে। এ অবস্থায় পাত্রী স্বভাবজাত লাজুকতার কারণে পরিস্থতির স্বীকার হয়, যথাযথ প্রতিবাদ করতে পারে না। কাজী বা বিচারকের কাছে তার অভিযোগ পেশ করতে লজ্জাবোধ করে। এটাই বাস্তব কথা। কিন্তু তার উপর আবশ্যক হচ্ছে, লাভ-ক্ষতির তুলনা করবে। কোন পথে চললে তার ক্ষতি বেশী হবে? অভিভাবকের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে তার কথা শুনে স্বামী ছাড়াই বসে থাকবে এবং বিবাহের বয়স পার করে দিবে। অথবা অভিভাবকের কথা শুনে দ্বীন হীন চরিত্র হীন মানুষকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে নিজের ভবিষ্যতকে অজানা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে। অথবা কাজীর আশ্রয় নিয়ে তার কাছে গিয়ে শরীয়ত সম্মত অধিকার আদায় করে নিবে।

এখন কোন পদক্ষেপটি তার জন্যে উপযুক্ত?
নিঃসন্দেহে শেষের পদক্ষেপটাই তার জন্যে নিরাপদ। সে বিচারকের নিকট উপস্থিত হবে এবং বিবাহ করিয়ে দেয়ার জন্য আবেদন করবে। কেননা এটা তার অধিকার। তাছাড়া বিচারকের কাছে আবেদন করার প্রেক্ষিতে ঐ জালেমদেরকে প্রতিহত করার একটি পথ উন্মুক্ত হবে, যারা তাদের অধিনস্থ মেয়েরদেরকে উপযুক্ত পাত্রের সাথে বিবাহ দিতে বাধা দেয়। অর্থাৎ তার এই পদক্ষেপে তিন প্রকার কল্যাণ সাধিত হবেঃ
• নারীর নিজের কল্যাণ। (স্বামী ছাড়া জীবন অতিবাহিত করা থেকে মুক্তি, অথবা খারাপ ও অপছন্দনীয় স্বামী থেকে মুক্তি)
• অন্যান্য নারীদের কল্যাণ। (কারণ তার অনুসরণ করে অন্য নারীরাও নিজেদের শরীয়ত সম্মত অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবে।)
• জালেম ও অপরিণামদর্শী অভিভাবকদের প্রতিহত করা। (যারা নিজের অধিনস্থদেরকে খেয়াল-খুশীমত পরিচালনা করে।) (দ্রঃ ফতোয়া ইসলামীয়াঃ ৩/১৪৮)
কিন্তু কোন অভিভাবক ব্যতীত কখনই কোন বিবাহ বিশুদ্ধ হবে না। যেমনটি পূর্বে হাদীছ বর্ণনা করা হয়েছে।

শরঈ পর্দা বলতে কী বুঝায়?

                                                                                                                       লেখক : আলী হাসান তৈয়ব
                                                                                                              সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
                                                                                                                        সূত্র : ইসলামহাউজ
ইতোপূর্বে আমি বিভিন্ন লেখায় পর্দার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছি। আলহামদুলিল্লাহ পর্দাকে অত্যাবশ্যক জ্ঞানে আমাদের কন্যা-জায়া-জননীরা পর্দা করেনও বটে। এখন ভাবনার বিষয় হলো, অধিকাংশ মা-বোন যে পর্দা রক্ষা করেন কিংবা যে পোশাকে নিজেকে পর্দাশীল ভাবেন তা কি শরীয়তের কাম্য পদ্ধতিতেই হয়? তারা যে পর্দা করেন তার কতটা শরীয়তের রূপরেখা মেনে করা হয়? বক্ষমাণ নিবন্ধে আমরা সে বিষয়টিই আলোচনার বিনীত প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

প্রিয় মুসলিম বোন, এ সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আমরা আপনার জন্য সে বিষয়টিই তুলে ধরতে চেয়েছি যা আপনাকে কল্যাণের পথ দেখাবে। যা হবে আপনার জীবন চলার পথে এক অতি দরকারি আলোকবর্তিকা। সে বোনদের জন্য যারা কি-না শরঈ পর্দা রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যারা আল্লাহর হুকুম বা বিধানকে আল্লাহরই নির্দেশিত উপায়ে পালনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সবার আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলি, যারা গতানুগতিক পর্দা করেন, যা মূলত রব কর্তৃক নির্ধারিত একটি ফরযের অপভ্রংশ বা বিকৃতির নামান্তর তাদেরও বিনীতভাবে বলব, কুরআন ও সুন্নাহর আলোক বিধৌত আলোচনা পড়ে আপনিও খানিক নিজেকে মূল্যায়ন করুন। নিজের পর্দা ও পোশাক নিয়ে একটু পর্যালোচনা কিংবা আত্মসমালোচনা করুন। আখেরে তা আপনারই মঙ্গল বয়ে আনবে। যেমন ইহকালে তেমনি পরকালে।

হে ইসলামের কন্যারা, যেনতেনভাবে আসলে পর্দা হয় না। বিস্ময়কর শোনালেও সত্য, হিজাব পরেও আপনি বেপর্দা নারীদের মধ্যে শামিল হতে পারেন :
• একেবারে সরু তথা আঁটশাট পোশাক পরে।
• প্যান্টের সঙ্গে বুটিকের কাজ করা আকর্ষণীয় স্কার্ফ মাথায় জড়িয়ে।
• ডিজাইন করা লেহেঙ্গার সঙ্গে পাতলা ফিনফিনে স্কার্ফ মাথায় জড়িয়ে।
• আপনার উন্মুক্ত বাহুদ্বয় এবং অনাবৃত পদযুগলের কারণে।
• আপনার অলংকার শোভিত নিমন্ত্রণমূলক পদবিক্ষেপের পরিণামে।  
• মোহনীয় দৃষ্টি, সুরেলা কণ্ঠ এবং কাঁচভাঙ্গা হাসি দিয়ে।
• আপনার সুরভিত ঘ্রাণ, সুউচ্চ হিল এবং অনুরণিত শব্দ দিয়ে। 
• চেহারায় সৌন্দর্য ও মনোমুগ্ধকর বর্ণের সুদীপ্ত আভা ছড়িয়ে।

কারণ, হিজাব কোনো প্রতীক নয়। ফ্যাশনের উপকরণ কিংবা সৌন্দর্য বর্ধনের সামগ্রীও নয়। এ এক অবশ্য পালনীয় বিধান। আল্লাহ এ হিজাব ফরয করেছেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর ওপর। এর প্রবর্তক আমরা কেউ নই; খোদ পুরুষ-নারীর স্রষ্টা মাবুদ আল্লাহ। অতএব এ বিষয়ে আমরা ভিন্ন মত দিতে পারি না। পারি না নতুন কিছু আবিষ্কার করতে। পারি না এর কোনো বিকল্প উদ্ভাবন করতে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,  

﴿ وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلٗا مُّبِينٗا ٣٦ ﴾ [الاحزاب: ٣٦] 

‘আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে’। {সূরা আল-আহযাব, আয়াত : ৩৬}

সত্যি বলতে হিজাব বা পর্দা ফরয হওয়া সম্পর্কে এত বেশি আয়াত ও হাদীস উল্লেখিত হয়েছে এবং এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও রূপরেখা সম্পর্কে এত বাণী ও বক্তব্য বিদ্যমান যে এ নিয়ে নতুন করে কিছু ভাবা ও প্রচারের যৌক্তিকতা নেই।

পূর্ণ ইসলামী পর্দার বিবরণ

আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম নারীর সম্মানার্থে এবং দুষ্ট লোকের অশিষ্ট আচরণ থেকে তার মর্যাদা রক্ষার্থে পর্দা ফরয করেছেন। পর্দা যেমন পুরুষদের রক্ষা করে নারীর ফিতনা থেকে তেমনি নারীকেও রক্ষা করে এ থেকে সৃষ্ট নানা কষ্টদায়ক ব্যাপার থেকে। ইসলামে প্রতিটি মুসলিম নারীর জন্য বেগানা পুরুষের সামনে পূর্ণ পর্দা রক্ষা করা জরুরী। তারা হলেন মাহরাম ব্যতীত বাকি সবাই। আর মাহরামগণ হলেন : ১. পিতা। ২. দাদা। ৩. স্বামীর পিতা তথা শ্বশুর। ৪. স্বামীর সন্তান তথা বৈমাত্রেয় পুত্র। ৫. নিজের পুত্র। ৬. ভাই। ৮. ভাইপো। ৯. বোনপো। ১০ চাচা-জ্যাঠা। ১১. মামা। দুধ পানজনিত মাহরামগণ যেমন পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآئِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ أَخَوَٰتِهِنَّ أَوۡ نِسَآئِهِنَّ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُنَّ أَوِ ٱلتَّٰبِعِينَ غَيۡرِ أُوْلِي ٱلۡإِرۡبَةِ مِنَ ٱلرِّجَالِ أَوِ ٱلطِّفۡلِ ٱلَّذِينَ لَمۡ يَظۡهَرُواْ عَلَىٰ عَوۡرَٰتِ ٱلنِّسَآءِۖ وَلَا يَضۡرِبۡنَ بِأَرۡجُلِهِنَّ لِيُعۡلَمَ مَا يُخۡفِينَ مِن زِينَتِهِنَّۚ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [النور: ٣١] 

‘আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার’। {সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩১}

যেখানেই কোনো বেগানা পুরুষ থাকবে সেখানে শরয়ী হিজাবের আটটি শর্তের কোনোটি লঙ্ঘন করা হারাম। কেননা অনেক মহিলা ঘরের বাইরে হিজাব পরেন ঠিকই কিন্তু তারা নিজেদের নিকটাত্মীয় গাইরে মাহরামের এর সামনে কোনো কোনো শর্ত লঙ্ঘন করেন। যেমন চাচাতো বা মামাতো ভাইদের সামনে মাথা ঢাকেন ঠিক কিন্তু তাদের সামনে অন্যদের মতো পুরোপুরি পর্দা করেন না। এতে করে তারা সুস্পষ্ট গুনাহ ও হারামে লিপ্ত হন।

পূর্ণ পর্দার শর্তগুলো নিম্নরূপ

প্রথম শর্ত : অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মতে পুরো শরীর ঢাকা। ফিতনার আশংকা থাকলে সর্বসম্মতিক্রমে মুখ ও হাতের তালুদ্বয় ঢাকাও পর্দার অন্তর্ভুক্ত।

দ্বিতীয় শর্ত : হিজাব নিজেই সৌন্দর্যবর্ধক না হওয়া। যেমন এতটা আকর্ষণীয় রঙের হওয়া যা সবার দৃষ্টি কাড়ে। আল্লাহ বলেন,

﴿ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ ﴾ [النور: ٣١] 

‘আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না ...। {সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩১}
অতএব পর্দা যখন খোদ নিজেই সৌন্দর্যের আকার ধারণ করবে তা প্রকাশ বৈধ হবে না। তাকে হিজাব বা পর্দাও বলা হবে না। কারণ, হিজাব তো সেটিই যা বেগানা পুরুষের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশে অন্তরায় সৃষ্টি করে। সুতরাং বোরকা পরেও যারা নিজের সৌন্দর্য প্রকাশে অস্থির তারা যেন বিষয়টি ভেবে দেখেন। সত্যিকারার্থে শরঈ পর্দা রক্ষায় সংকল্পবদ্ধ হয়ে তারা যেন সৌন্দর্য আড়ালকারী রঙকে অগ্রাধিকার দেন। বলাবাহুল্য সেটি হলো কালো রঙ। পাশাপাশি তারা যেন কারুকাজ ও জাঁকজমককেও এড়িয়ে যান।

তৃতীয় শর্ত : মোটা ও পুরু হওয়া যাতে সৌন্দর্য দৃশ্যমান না হয়। কারণ হিজাবের উদ্দেশ্য নারীর মুগ্ধ করা সৌন্দর্য পরপুরুষের আড়াল করা। অতএব পোশাক যদি আড়ালকারী না হয় তবে তাকে হিজাব আখ্যায়িত করা যায় না। কেননা আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا، قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ، رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ، وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا»

‘জাহান্নামবাসী দুটি দল রয়েছে। যাদেরকে আমি এখনো দেখিনি। একদল এমন লোক যাদের হাতে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে যা দিয়ে তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। আর অন্য দল এমন নারী যারা পোশাক পরেও উলঙ্গ থাকে। তারা অন্যদের তাদের প্রতি আকৃষ্ট করবে নিজেরাও অন্যদের প্রতি ঝুঁকবে। তাদের মস্তক উটের পিঠের কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ এর ঘ্রাণ এত এত দূর থেকেও পাওয়া যায়।’ [মুসলিম : ২১২৮]

চতুর্থ শর্ত : প্রশস্ত ও ঢিলেঢালা হওয়া এবং সংকুচিত ও অন্তর্শোভা পরিদৃশ্যকারী না হওয়া। যাতে অঙ্গের আকার বা অবয়ব দৃশ্যমান না হয় এবং দেহের প্রলুব্ধকর অঙ্গ প্রস্ফুটিত না করে। এটিও পূর্বে বর্ণিত হাদীসের নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। 

পঞ্চম শর্ত : কাপড় সুগন্ধিযুক্ত না হওয়া। কারণ এতে করে তা পুরুষকে আরও বেশি প্রলুব্ধ করে। নারীর আতর ব্যবহারকে ব্যভিচারের পর্যায়ে গণ্য করা হয়েছে। আবূ মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«كُلُّ عَيْنٍ زَانِيَةٌ، وَالمَرْأَةُ إِذَا اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ بِالمَجْلِسِ فَهِيَ كَذَا وَكَذَا» يَعْنِي زَانِيَةً «هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ»

‘প্রতিটি চোখই ব্যভিচারী। আর নারী যখন সুগন্ধি ব্যবহার করে জনসমাগমের পাশ দিয়ে অতিক্রম তখন সে এটা সেটা অর্থাৎ ব্যভিচারী হয়।’ (কারণ সুগন্ধি পুরুষকে আকর্ষণ করে তার মধ্যে কামাগ্নি জ্বালিয়ে দেয়। আর শেষাবধি এটিই তাকে ব্যভিচারের দিকে নিয়ে যায়।) [তিরমিযী : ২৭৮৬] 

ষষ্ঠ শর্ত : পুরুষের পোশাকের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ না হওয়া। আবূ হুরায়রা রাদিয়াআল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ، وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ»

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেসব পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন যারা নারীদের পোশাক পরে এবং সেসব নারীকে অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের পোশাক পরিধান করে। [আবূ দাঊদ : ৪০৯৮]
আরেক হাদীসে এসেছে, ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُتَرَجِّلاتِ مِنَ النِّسَاءِ، وَالْمُخَنَّثِينَ مِنَ الرِّجَالَ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদের বেশধারী নারীদের এবং নারীদের বেশধারী পুরুষদের অভিসম্পাত করেছেন। [মুসনাদ আহমাদ : ২০০৬]

সপ্তম শর্ত : কোনো আহলে কিতাব তথা ইহুদী-খ্রিস্টান বা বিধর্মীর পোশাকের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ না হওয়া। কেননা ইসলামী শরীয়ত কাফেরদের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে নিষেধ করেছে। পোশাক ও সংস্কৃতিতে তাদের থেকে ভিন্নতা অবলম্বনে উদ্বুদ্ধ করেছে। কেননা আবদুল্লাহ ইবন আমর বিন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
رَأَى رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَلَىَّ ثَوْبَيْنِ مُعَصْفَرَيْنِ فَقَالَ « إِنَّ هَذِهِ مِنْ ثِيَابِ الْكُفَّارِ فَلاَ تَلْبَسْهَا ».

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার গায়ে জাফরান ব্যবহৃত একজোড়া কাপড় দেখে বললেন, ‘এসব হলো কাফেরদের পোশাক। তাই তুমি তা পরিধান করো না।’ [মুসলিম : ৫৫৫৫]

অষ্টম শর্ত : প্রসিদ্ধি লাভের পোশাক না হওয়া। আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مَنْ لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ فِي الدُّنْيَا ، أَلْبَسَهُ اللَّهُ ثَوْبَ مَذَلَّةٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، ثُمَّ أَلْهَبَ فِيهِ نَارًا.

‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় প্রসিদ্ধি লাভের পোশাক পরবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। অতপর সে কাপড়ে তাকে প্রজ্বলিত করবেন।’ [ইবন মাজা : ৩৬০৭]
প্রসিদ্ধি লাভের পোশাক সেটিই যা পরিধানের উদ্দেশ্য থাকে মানুষের নাম কুড়ানো। যেমন অহংকারের সঙ্গে রূপের বাহার দেখিয়ে খুব দামী বস্ত্র পরিধান করা। এই শর্তটি নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

বোন, আপনি জানেন কি?
আমার মুসলিম বোন, আপনি কি জানেন শরয়ী হিজাব কী? হিজাব কেমন হতে হবে এবং এর শর্তাবলি কী? আর এ ব্যাপারে আপনার অজ্ঞতায় ক্ষতিই বা কী? আপনি কি পর্দা করছেন ‘কেন হিজাব পরেছো’ এবং ‘কীভাবে হিজাব পরেছো’ সে প্রশ্নের সদুত্তর দিয়ে পার পেতে নাকি সামাজিক রীতি হিসেবে? ঠিক বা বেঠিক যা-ই হোক পরিপার্শ্বের প্রভাবে? আপনি কি হিজাব নিয়ে ভেবে দেখেছন কে একে ফরয করেছেন? কেনইবা ফরয করেছেন? আর তা হওয়া চাই কেমন?
হ্যা, আমি বিশ্বাস করতে চাই আপনি এ ব্যাপারে অজ্ঞ নন। আপনি কেন অজ্ঞ থাকবেন যেখানে আপনাকে দেখি চাকরিক্ষেত্রে সফল পরিচালিকা, শিক্ষিকা, অধ্যাপিকা, প্রধান শিক্ষিকা, নিয়ন্ত্রক থেকে নিয়ে ডাক্তার আর নার্স হতে। আপনাকে দেখি মেধাবী অফিসার, জনপ্রিয় লেখক, অকুতোভয় সাংবাদিক থেকে নিয়ে দুরন্ত সব পেশার কত কিছুই না হতে। দেখি মা, বোন, কন্যা ও স্ত্রী হিসেবে অসামান্য ভূমিকা রাখতে। 

হে খাদিজা ও খাওলার কন্যা, পর্দার ক্ষেত্রে আপনার অনমনীয়তা দেখেই কি রিপু ও প্রবৃত্তি পূজারীরা আপনাকে নিয়ে ঠাট্টা করে? প্রতিবেশি ও আশপাশের দোকানে দাঁড়ানো তরুণরা মশকরা করে? এর প্রভাবেই কি আপনি সব অপরিনামদর্শী ফ্যাশনের পেছনে ছুটেন? আরও আশ্চর্য হয়ে আমাদের কোনো কোনো বোনকে দেখি, সন্ধ্যার আগে-পরে খোলা নকশি আঁকা উজ্জ্বল গেঞ্জি, ফতুয়া বা টি-শার্ট পরে পথে বেরিয়েছেন! ভেবে দেখুন, নিজের মধ্যে আপনি কোন গুণগুলো দেখতে চেয়েছেন আর কোনগুলোকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন? পরিতাপের বিষয়, এমন পরিধেয়কেও আমরা অনেকে সুশীল পোশাক বলে আখ্যায়িত করে মর্যাদা বৃদ্ধি করি!!
না, সহস্র না :  
না, সহস্র না। অজস্র না। খোদ এই গেঞ্জি, ফতুয়া আর শার্টই তো আরেক পোশাকের অপেক্ষা রাখে। এর কমনীয়তা আড়াল করতে। এর অনাবৃতকে আবৃত করতে। এর ছিদ্র ও ফাঁকফোকর বন্ধ করতে। যার ওপর দিয়ে বক্ষবন্ধনীর রং কিংবা নিচের সেমিসও দেখা যায়। আল্লাহর শপথ এটি কোনো সুশীল বা মার্জিত পোশাক নয়। শালীন হতে হলে তা হতে হবে স্পর্শকাতর ও মনোরঞ্জক সব নারী অঙ্গের আড়াল করা পোশাক। আবূ উযাইনা ছাদফী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«خَيْرُ نِسَائِكُمُ الْوَدُودُ الْوَلُودُ الْمُوَاتِيَةُ الْمُوَاسِيَةُ، إِذَا اتَّقَيْنَ اللهَ، وَشَرُّ نِسَائِكُمُ الْمُتَبَرِّجَاتُ الْمُتَخَيِلَّاتُ وَهُنَّ الْمُنَافِقَاتُ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْهُنَّ، إِلَّا مِثْلُ الْغُرَابِ الْأَعْصَمِ»
‘তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে তারাই সর্বোত্তম যারা আল্লাহকে ভয় করার পাশাপাশি স্বামীকে ভক্ত করে, অধিক সন্তান জন্ম দেয় এবং (স্বামীর দুঃখে তার প্রতি) সমব্যথী ও সহানুভূতিশীল হয়। পক্ষান্তরে তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সবচে মন্দ তারাই, যারা বেপর্দা হয়ে দম্ভ ভরে চলে। এরাই হলো মুনাফিক। এরা জান্নাতে প্রবেশ করবে কেবল লাল ঠোঁট ও পা বিশিষ্ট কাকদের মতো। (অর্থাৎ এমন বৈশিষ্ট্যের কাক যেমন সংখ্যায় অনেক কম তেমনি তারা কম সংখ্যক জান্নাতে প্রবেশ করবে।) [বাইহাকী : ১৩৪৭৮] 

শালীন পোশাকের এই শর্ত পূরণ কেবল বাইরে বেরোবার সময় নয়; গৃহাভ্যন্তরে করতে হবে। নিজেদের যথেষ্ট ধার্মিক জ্ঞানকারী কোনো কোনো পরিবারের মেয়েদের দৃষ্টান্ত আমার সামনে উজ্জ্বল যেখানে দেখা যায় মেয়েরা বিদ্যালয়ে বা কর্মস্থলে তথা বাইরে যাওয়ার সময় মোটামুটি পর্দার শর্ত রক্ষা আবশ্যিক জ্ঞান করলেও মহিলা ও মাহরাম পুরুষের সামনে সংকীর্ণ পোশাক পরায় কোনো দোষ দেখেন না। অথচ তাদের সামনেও মেয়েদের কমনীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও দেহের আকর্ষণীয় জায়গা অনাবৃত ও উন্মুক্ত করা হারাম। একটু আগেই হাদীসটি উল্লেখ করা হয়েছে। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا، قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ، رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ، وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا»
‘জাহান্নামবাসী দুটি দল রয়েছে। যাদেরকে আমি এখনো দেখিনি। একদল এমন লোক যাদের হাতে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে যা দিয়ে তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। আর অন্য দল এমন নারী যারা পোশাক পরেও উলঙ্গ থাকে। তারা অন্যদের তাদের প্রতি আকৃষ্ট করবে নিজেরাও অন্যদের প্রতি ঝুঁকবে। তাদের মস্তক উটের পিঠের কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ এর ঘ্রাণ এত এত দূর থেকেও পাওয়া যায়।’ [মুসলিম : ২১২৮]
হাদীসে উল্লেখিত ‘পোশাক পরেও উলঙ্গ’–এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,  এমন সংক্ষিপ্ত পোশাক যা নারীর আবরণীয় অংশ ঢাকতে যথেষ্ট নয়। এমন পাতলা পোশাক যা ভেদ করে সহজেই নারীর ত্বক দেখা যায়। এমনকি টাইট কাপড় যা ভেদ করে ত্বক দেখা যায় না বটে তবে তা নারীর আকর্ষণীয় অবয়বকে পরিস্ফূট করে দেয়। এসব পোশাক নারীরা কেবল তার সামনেই পরতে পারেন যার সামনে নিজের গোপন সৌন্দর্য তুলে ধরার অনুমতি রয়েছে। বলাবাহুল্য তিনি হলেন একমাত্র স্বামী। কেননা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো পর্দা নেই। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِفُرُوجِهِمۡ حَٰفِظُونَ ٥ إِلَّا عَلَىٰٓ أَزۡوَٰجِهِمۡ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُمۡ فَإِنَّهُمۡ غَيۡرُ مَلُومِينَ ٦ فَمَنِ ٱبۡتَغَىٰ وَرَآءَ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡعَادُونَ ٧ ﴾ [المؤمنون: ٥،  ٧] 

‘আর যারা তাদের নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী। তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে তারা ছাড়া, নিশ্চয় এতে তারা নিন্দিত হবে না। অতঃপর যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।’ {সূরা আল-মু’মিনূন, আয়াত : ৫-৭}
উল্লেখিত শব্দের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন, অর্থাৎ এমন পোশাক পরিধান করে যা তাকে পুরোপুরি আবৃত করে না। ফলে কাপড় পরলেও মূলত সে উলঙ্গই থেকে যায়। যেমন ওই নারী যে কি-না এমন পাতলা কাপড় পরে যা তার কোমল ত্বক দৃশ্যমান করে কিংবা এমন আঁটশাট বস্ত্র গায়ে জড়ায় যা তার শরীরের বাহু, নিতম্ব প্রভৃতির ভাঁজগুলোকে পরিষ্কার ফুটিয়ে তোলে। নারীর পোশাক সেটিই যা তার আপাদমস্তক ঢেকে ফেলে। দেহের কোনো অংশই প্রকাশ করে না। পুরু ও প্রশস্ত হওয়ায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আকারও সুদৃশ্য করে না। [মাজুমূ‘ ফাতাওয়া : ২২/১৪৬] 

হিজাব এতদিন শিল্পিত সৌন্দর্যবিকাশ বা তরুণদের রিপু সুরসুরি দেয়ার উপাদান ছিল না, যেমনটি আজ হয়েছে। যাকে বলা হচ্ছে নামকাওয়াস্তে পর্দা। তখনকার পর্দা ছিল কেবল আল্লাহর উদ্দেশে নিবেদিত। ছিল নারীর সম্মান ও সতীত্বের রক্ষাকবচ। প্রিয় মুসলিম বোন, আপনি যতদিন নিজেকে আল্লাহর ফযলে পর্দাকারী দেখতে পছন্দ করেন, নিজেকে তাদের কাতারে দেখতে চাইবেন যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি তালাশ করে, আপনার দায়িত্ব হবে ঠিক সেভাবে বোরকা পরা যেভাবে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। তেমন নয় যেমন যুগ চায় কিংবা আমাদের মন টানে। আল্লাহ আপনাদের বাঞ্ছিত পদ্ধতিতে কাম্য পর্দা করবার তাওফীক দান করুন। আমীন।